মেহগনি গাছের দাম জানার আগে জেনে নেই যে, মেহগনি গাছ (Swietenia macrophylla) বাংলাদেশে এক বিশেষ গুরুত্ববহ বৃক্ষ হিসেবে পরিচিত। এ গাছটি তার উচ্চ মানের কাঠের জন্য বহুল ব্যবহৃত হয়। মেহগনি গাছ মূলত আমেরিকা মহাদেশের, তবে এখন এটি বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যাপকভাবে চাষ করা হচ্ছে।
মেহগনি গাছের বৈশিষ্ট্য
মেহগনি গাছটি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া একটি গাছ। এটি উচ্চতায় প্রায় ২০-৩০ মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে এবং এর ব্যাস ১.৫ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। গাছটির পাতা গাঢ় সবুজ রঙের এবং এর কাঠ লালচে-বাদামী রঙের। মেহগনি গাছের কাঠ খুবই মজবুত ও টেকসই, যা এটি আসবাবপত্র, ফার্নিচার, নৌকা নির্মাণ এবং অন্যান্য কাঠামো তৈরির জন্য উপযোগী করে তোলে।
মেহগনি গাছ চাষের জন্য প্রস্তুতি
মেহগনি গাছের চাষের জন্য প্রথমে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিশ্চিত করতে হবে:
- মাটি নির্বাচন: মেহগনি গাছ হালকা থেকে মাঝারি দো-আঁশ মাটিতে ভালোভাবে বৃদ্ধি পায়। মাটি অবশ্যই ভালোভাবে ড্রেনেজযুক্ত হতে হবে, যাতে জল জমে না থাকে। গাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য মাটির পিএইচ স্তর ৬.৫ থেকে ৭.৫ এর মধ্যে রাখা উচিত।
- আবহাওয়া: মেহগনি গাছ সাধারণত উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় ভালো জন্মায়। বাংলাদেশে বর্ষাকালে এই গাছ দ্রুত বৃদ্ধি পায়, কারণ গাছটি প্রচুর পরিমাণে পানি গ্রহণ করে।
- বীজ সংগ্রহ ও চারা তৈরি: মেহগনি গাছের চাষের জন্য প্রথমে ভালো মানের বীজ সংগ্রহ করতে হবে। বীজ থেকে চারা তৈরি করতে ২-৩ মাস সময় লাগে। বীজকে সরাসরি জমিতে বপন করা যায়, তবে বীজতলায় চারাগাছ তৈরি করলে গাছ দ্রুত এবং মজবুতভাবে বৃদ্ধি পায়। বীজ বপনের আগে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখা ভালো, এতে অঙ্কুরোদ্গমের হার বাড়ে।
মেহগনি গাছের চাষের পদ্ধতি
- জমি প্রস্তুতি: মেহগনি গাছের জন্য জমি প্রস্তুত করতে প্রথমে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। মাটি ভালোভাবে চাষ দিয়ে নরম করে নিতে হবে, যাতে গাছের শিকড় ভালোভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। প্রয়োজনীয় জৈব সার ব্যবহার করে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
- চারা রোপণ: মেহগনি গাছের চারা সাধারণত ৬-১২ মাস বয়সে জমিতে রোপণ করা হয়। ১০ থেকে ১৫ ফুট দূরত্বে চারা রোপণ করা ভালো, যাতে গাছগুলো পর্যাপ্ত জায়গা পায়। রোপণের সময় চারাগুলোর গোড়ায় মাটি চেপে দিতে হবে, যাতে গাছটি শক্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকে।
- পানি সরবরাহ: প্রথম ২-৩ বছর মেহগনি গাছের চারায় নিয়মিত পানি দেওয়া প্রয়োজন। বর্ষাকালে পানি দেওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া যায়, তবে গ্রীষ্মকালে নিয়মিত পানি দেওয়া উচিত।
- সার প্রয়োগ: মেহগনি গাছের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য বছরে অন্তত দুবার জৈব এবং রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। গাছের বয়স অনুযায়ী সার প্রয়োগের পরিমাণ বাড়ানো উচিত। জৈব সার যেমন গোবর বা কম্পোস্ট ব্যবহার করলে গাছের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়।
- আগাছা নিয়ন্ত্রণ: গাছের চারপাশে আগাছা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে, কারণ আগাছা গাছের পুষ্টি শোষণ করে এবং গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে। প্রতি মাসে একবার আগাছা পরিষ্কার করাই ভালো।
- পোকামাকড় প্রতিরোধ: মেহগনি গাছে মাঝে মাঝে পোকামাকড় আক্রমণ করতে পারে। গাছের পাতা বা ডালপালা যদি পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয়, তাহলে জৈব কীটনাশক বা রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। এছাড়াও, নিয়মিত গাছ পর্যবেক্ষণ করে কোনো রোগ বা পোকামাকড়ের আক্রমণ দ্রুত শনাক্ত করা উচিত।
যেকোনো গাছ কিনতে আমাদের শপ ভিজিট করুন।
মেহগনি গাছ দেখতে কেমন।
মেহগনি গাছের কাঠের ব্যবহার
মেহগনি গাছের কাঠ আসবাবপত্র তৈরির জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয়। এর কাঠ মজবুত, দীর্ঘস্থায়ী এবং আকর্ষণীয় লালচে-বাদামী রঙের হওয়ায় এটি উচ্চ মানের আসবাবপত্র ও অন্যান্য কাঠামো তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া, মেহগনি কাঠ ব্যবহারে তৈরিকৃত আসবাবপত্রের চাহিদা অনেক বেশি।
মেহগনি গাছের বাজার মূল্য।
বাংলাদেশে মেহগনি গাছের দাম বিভিন্ন বিষয়ে নির্ভর করে, যেমন গাছের বয়স, আকার, স্থান এবং কাঠের মান। মেহগনি গাছের দাম সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য নিচে দেওয়া হল:
-
গাছের বয়স ও আকার অনুযায়ী দাম।
মেহগনি গাছের বয়স ও আকারের উপর ভিত্তি করে এর দাম নির্ধারিত হয়। একটি পূর্ণবয়স্ক মেহগনি গাছ, যা সাধারণত ১০-১৫ বছর বয়সী, এর দাম ২০,০০০ টাকা থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এর চেয়ে কম বয়সী গাছের দাম কম হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ৫-৭ বছর বয়সী একটি গাছের দাম ১০,০০০ টাকা থেকে ১৫,০০০ টাকা হতে পারে।
-
কাঠের মান অনুযায়ী দাম।
মেহগনি গাছের কাঠের মান উচ্চমানের হওয়ায় এর দামও বেশি হয়ে থাকে। ভালো মানের মেহগনি কাঠ মজবুত, দীর্ঘস্থায়ী এবং আকর্ষণীয় লালচে-বাদামী রঙের হয়। উচ্চমানের কাঠের দাম প্রতি ঘনফুট ১,০০০ টাকা থেকে ২,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। নিম্নমানের কাঠের দাম তুলনামূলকভাবে কম হয়।
-
স্থান অনুযায়ী দাম।
গাছের অবস্থানের উপরও দাম নির্ভর করে। শহরাঞ্চলে বা বাজারের কাছাকাছি স্থানে মেহগনি গাছের দাম বেশি হতে পারে। গ্রামীণ এলাকায় বা দূরবর্তী স্থানে দাম তুলনামূলকভাবে কম হতে পারে, কারণ এখানে গাছ পরিবহনের খরচ বেশি হয়।
-
বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দাম।
মেহগনি কাঠের বাজারের চাহিদা অনুযায়ী এর দাম ওঠানামা করতে পারে। যখন মেহগনি কাঠের চাহিদা বেশি থাকে, তখন এর দামও বৃদ্ধি পায়। এছাড়া, মৌসুমী চাহিদার উপরও দাম নির্ভর করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, শীতকাল বা বর্ষাকালে কাঠের চাহিদা কিছুটা কম থাকতে পারে।
-
চারা মেহগনি গাছের দাম
মেহগনি চারা গাছের দাম নির্ভর করে এর আকার ও বয়সের উপর। সাধারণত, ১-২ বছরের চারা গাছের দাম ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। বড় আকারের চারা গাছের দাম আরও বেশি হতে পারে। চারা গাছের দাম স্থানের উপরও নির্ভর করতে পারে, যেমন নার্সারি থেকে সরাসরি কিনলে দাম কম হতে পারে, আর বাজার থেকে কিনলে দাম কিছুটা বেশি হতে পারে।
পরামর্শ
মেহগনি গাছের চাষ ও বিক্রয় লাভজনক হতে পারে যদি সঠিকভাবে পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা করা হয়। চাষিরা যেন ভালো মানের গাছের চারা সংগ্রহ করেন এবং গাছের যত্ন নেন। বাজারের চাহিদা ও মূল্য সম্পর্কে সচেতন থাকাও গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অফিস বা বন বিভাগ থেকে পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
মেহগনি গাছের ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশে মেহগনি গাছের চাষ ও ব্যবহারের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। দেশে বনায়ন এবং কাঠের চাহিদা পূরণের জন্য মেহগনি গাছের চাষ বাড়ানো যেতে পারে। এছাড়া, এ গাছের চাষ কৃষকদের জন্য অতিরিক্ত আয়ের উৎস হতে পারে।
মেহগনি গাছ বাংলাদেশের বনায়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সঠিক যত্ন ও ব্যবস্থাপনায় এ গাছটি দেশের কাঠের চাহিদা মেটাতে এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
অন্যান্য পোষ্টগুলো পড়তে পারেন।
- Chamaedorea Cataractarum Plant: কীভাবে চাষ করবেন?
- Peperomia Hope Plant: কীভাবে চাষ করবেন?
- Calathea Pinstripe Plant: কীভাবে চাষ করবেন?
- Boston Fern Plant: কীভাবে চাষ করবেন?
- Hoya Kerrii Plant: কীভাবে চাষ করবেন?
- Golden Pothos Plant: কীভাবে চাষ করবেন?
- Calathea Roseopicta Plant: কীভাবে চাষ করবেন?
- Dracaena Corn Plant: কীভাবে চাষ করবেন?